ধুমধামেই বিয়েটা হলো

 গভীর রাত চারদিকে শুধু ঝেজি পোকার গান শোনা যায় জোছনাময় রাত আকাশ ভরা তারা আর সেই সুন্দর একটা রাতে আকাশ আর স্বপ্না নিরবে বসে আছে ৷ কারও মুখে কোনো কথা নেই আকাশ আনার্সের ছাত্র আর স্বপ্না ইন্টার সেকেন্ট ইয়ারে ৷ দুজন দুজনকে খুবই ভালোবাসে আকাশ স্বপ্নার মুখে আগে কথাটা শুনতে চাই এজন্য আকাশ স্বপ্নাকে এ বিষয়ে কিছুই বলে না আবার স্বপ্না ভাবে মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না ৷ তাই সে কি করে আকাশকে ভালোবাসার কথাটা আগে বলবে তাই স্বপ্নাও আকাশের মুখ থেকে আগে ভালোবাসার কথা শোনার প্রতিক্ষায় আছে ৷ অনেকক্ষন পর তাদের নির্জবতা ঊপেক্ষা করে আকাশ কথা বলে উঠলো আকাশ আজকের রাতটা খুব সুন্দর তাই না স্বপ্না হুম আকাশ অনেক দিন ধরে তোমাকে একটা কথা বলবো ভাবতেছি বলি বলি করে আর বলা হচ্ছে না ৷৷ স্বপ্না আপনজনের সাথে কথা বলতে এতো ভাবতে হবে না বলে ফেলো ৷ আকাশ নাহ্ থাক অন্য দিন বলবো ৷৷ স্বপ্না দেখো এতো ভূমিকা কিন্তু আমি একদম পছন্দ করি না বলতে চাইছিলা বলো ৷ আকাশ তুমি কি কাউকে ভলোবাসো স্বপ্না হুম তো আকাশের মাথায় বাজ ভাঙার মতো অবস্থা আকাশের মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না স্বপ্না কি হলো আকাশ নাহ্ কিছু না এই কথাটাই জানতে চাইছিলাম অনেক রাত হয়েছে যাও ঘুমিয়ে পড়ো স্বপ্না তুমি ঘুমাতে যাবে না আকাশ যাবো পরে এখন ঘুম আসবে না ঘুম আমার থেকে ছুটি নিয়েছে ৷ স্বপ্না আচ্ছা তুমি থাকো আমি যাই ৷৷ স্বপ্না বিছানায় গিয়ে কেঁদে দেয় আর ভাবে কেনো যে আকাশ তুমি আমার সাথে এমন করো ভালোবাসার মানুষকে মুখ ফুটে বলতে পারোনা ভালোবাসি তুমি ছাড়া যে আমার জিবনটা অন্ধকারে ঢাকা আই লাভ ইউ আকাশ আই রিয়েলি লাভ ইউ পরদিন তারা একইসাথে স্কুলে যায় ক্লাস শেষে তারা দুজন নদীর পাড়ে হাটতে যায় কিন্তু তাদের মনের কথা মনেই থেকে যায় কেউ মুখ ফুটে বলতে পারে না ৷ এভাবে চলতে থাকে তাদের জীবন কিন্তু জীবনটা তো আর একঘেয়মি নয় ৷ স্বপ্নাকে সাগর নামে একটা ছেলে প্রপোজ করছিল যার উত্তর সাগর একটা থাপ্পড় পেয়েছিল সাগর আকাশের থেকে কোনো অংশে কম নয় বরং আরও বেশি সাগরের বাবা একজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী তার ভিতর আবার সাগরের বাবা স্বপ্নার বাবার ছেলেবেলার বন্ধু ৷ সাগর হেরে যাওয়ার পাত্র নয় সে স্বপ্নাকে কাছে পাওয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন পার্কে ঘুরতে নিয়ে যায় ৷ আকাশ স্বপ্নাকে বেশি সময় দিতে পারে না কারণ সে অনেক গরীব তার বাবা নেই মা আর ছোট একটা বোন নিয়েই তার সংসার যার কারণে তাকে টিউশনি করে টাকা রোজগার করে নিতে হয় আকাশের মা অন্যের বািড়তে কাজ করে ৷ আকাশের মায়ের অনেক স্বপ্ন আকাশ ডাক্তার হবে তাই শতো দংখেও আকাশ লেখাপড়া করে যাচ্ছে ৷ কিন্তু স্বপ্নার প্রতি আকাশের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই দিনেদিনে আকাশ স্বপ্নাকে আরও আপন করে নিয়েছে ৷ তাই আকাশ ভাবছে স্বপ্নাকে তার ভালোবাসার কথা দুয়েক দিনের মধ্যেই বলতে হবে ৷ কিন্তু সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না স্বপ্না একদিন আকাশকে ভুলে সাগরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলো সাগর আর অপেক্ষা না করে একদিন স্বপ্নাকে বললো সাগর স্বপ্না আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই স্বপ্না কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সাগর হুম স্বপ্না এতদিন প্রেমিকারা প্রেমিকদের বলে বিয়েতে রাজি করাতে পারে না তুমি দেখছি তার উল্টোটা সাগর আমি তোমাকে এক মুহুর্ত ছেড়ে থাকতে পারছি না আমি আমার বাবার সাথে বলেছি উনি রাজি হয়েছেন ৷ এখন তুমি তোমার বাবাকে বলবে আর যদি না বলতে পারো তবে আমিই বলবো ৷৷ স্বপ্না পাগল হলে নাকি আচ্ছা ঠিক আছে আমিই বলবো ৷৷ এই বলে তারা দুজন বাসায় চলে গেলো স্বপ্না তার বাবাকে সব খুলে বললো ৷ স্বপ্নার বাবা রাজি হলেন কারণ এর ফলে তাদের বন্ধুত্ব বেয়াইতে পরিণত হবে ৷ স্বপ্নার বাবা সাগরের বাবাকে বলে বিয়ের সব কথা পাকাপাকি করে ফেললো ৷ সামনের সপ্তাই ওদের বিয়ে বিয়ে নিয়ে তাদের কেনাকাটা এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়েছে ৷ একদিন আকাশ স্বপ্নাকে ভালোবাসার কথা বলবে বলে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে কলেজে গেলো কিন্তু সেখানে তার দেখা পেলো না ৷ অবশেষে বিকেলের কচিং সেন্টারে স্বপ্নাকে দেখতে পেলো স্বপ্না আকাশকে দেখে কিছুটা অবাক হলো কারণ প্রায় একমাস তাদের ভিতর কোনো কথা হয়নি স্বপ্নাকে দেখে আকাশ ফুলটা পিছনে লুকালো আকাশ কেমন আছো স্বপ্না স্বপ্না ভালো তুমি আকাশ নাহ্ তেমন ভালো নেই স্বপ্না কেনো কি হয়েছে আকাশ চলো না একটু নদীর ধারে ঘুরে আসি সেখানে সব বলবো ৷ স্বপ্না কিন্তু আমার যে একটু কাজ ছিল আকাশ বেশি সময় নিবো না মাত্র আধ ঘন্টার জন্য চলো স্বপ্না আচ্ছা চলো কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে কিন্তু আকাশ ঠিক আছে চলো ৷৷ দুজন নদীর ধার দিয়ে নিরবে হাটতে লাগলো হঠাৎ স্বপ্না বলে উঠলো স্বপ্না জানো আকাশ এই মাসের ভিতর একটা কাজ করে ফেলেছি আকাশ কি স্বপ্না বিয়ে আকাশ কার বিয়ে স্বপ্না কার আবার আমার আকাশ ও কার সাথে স্বপ্না সাগরের সাথে আকাশের হাত থেকে ফুলটা মাটিতে পড়ে গেলো স্বপ্নাকে ঘিরে আকাশের এতো দিনের স্বপ্ন এক সেকেন্ডেই সব ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো ৷৷ তবুও আকাশ স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো স্বপ্না কি হলো কথা বলছোনা কেনো আকাশের চোখ পানিতে ভরে গেলো আকাশের মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না ৷ স্বপ্না তোমাকে কিন্তু আমার বিয়ে আসতেই হবে আকাশ হাঁ যাবো না কেনো এই বলো আকাশ পকেট থেকে একটা রোমাল বের করে চোখ মুছতে লাগলো স্বপ্না চোখে আবার কি হলো আকাশ না চোখে মনে হয় ময়লা পড়েছে স্বপ্না আচ্ছা সন্ধ্যা হয়ে সাচ্ছে আমি এখন যাই এই বলে স্বপ্না চলে গেলো ৷ আকাশ স্বপ্নাকে বাঁধা দেওয়ার কোনো চেষ্টা করলো না শুধু স্বপ্নার চলে যাওয়াটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো আর দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো যা বাঁধা দেওয়ার ক্ষমতা আকাশের রইলো না ৷ আকাশ তার পর থেকে স্বপ্নাকে ভুলে থাকার জন্য অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু যতোই ভুলার চেষ্টা করে ততোই স্বপ্নার কথা মনে পড়ে ৷ অবশেষে আকাশ নেশা করা শুরু করলো মদ বিড়ি সিগারেট গাজা কোনো কিছুই বাদ রাখলো না ৷ আজ সাগরের সাথে স্বপ্নার বিয়ে বেশ ধুমধামেই বিয়েটা হলো কিন্তু বাসর রাত্রিটি হলো স্বপ্নার জিবনের কাল রাত্রি ৷ সাগর বাসর ঘরে ঢুকেই সব ফুল ছিড়ে ফেললো আর সজোরে স্বপ্নার গালো ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় বসালো স্বপ্না সব কিছু যেনো ঝাপসা দেখা শুরু করলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাগর বললো মনে আছে রাক্ষসী প্রথম যেদিন তোকে প্রপোজ করছিলাম তুই আমার গালে থাপ্পড় দিয়েছিলি সেদিন থেকে আমি আর রাতে ঘুমাতে পারেনি ঘুমালেই তোর থাপ্পড়ের কথা মনে পড়তো সেদিন আমি প্রতিঙ্গা করছিলাম তোকে বিয়ে করে আমি সারাজিবন এর বদলা নিব আমি আশাকে ভালোবাসি তোকে কোনোদিনই ভালোবাসেনি আর বাসবোও না তোকে আমি কোনদিনই আমার বউয়ের মর্যাদা দিব না আজ থেকে আমার বদলা নেওয়ার দিন শুরু তারপর থেকে স্বপ্নার জীবনটা দংখের হতে থাকে ৷ আকাশ অতিরিক্ত নেশার কারণে গ্রামের লোকেরা তাকে দেখে থুতু দেয় যে ছেলে একজন ক্লাসের বেস্ট বয় ছিল সে আজ নেশাখোর ৷ একসময় আকাশ নেশা করার ফলে মৃত্যুর মুখে পতিত হয় এবং অনেক কষ্টে একটা চিঠি লেখে স্বপ্নাকে দেওয়ার জন্য ৷ চিঠিটা আকাশ স্বপ্নার এক বান্দুবির কাছে দিয়ে আসে আজ স্বপ্নার কথা খুব মনে পড়ছে আকাশের ৷ আকাশ রাতে প্রচুর নেশা করে যার ফলে আকাশ অন্ধকার দেখতে শুরু করে আর বুকের ভিতরটা কেমন ব্যথা অনুভব হয় অবশেষে আকাশ পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিয়ে পরপারে চলে যায় ৷ স্বপ্না আকাশের চিঠিটা পাওয়ার পর রাতে চিঠিটা পড়ছে কখন যে স্বপ্নার দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে লাগলো স্বপ্না নিজেও জানে না ৷ স্বপ্না হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো তখনই স্বপ্না পাগলের মতো আকাশের উদ্দেশ্যে দৌড়াতে শুরু করলো কিন্তু ততোক্ষণে আকাশ আর দুনিয়ার মাঝে নেই ৷ স্বপ্না গিয়ে আকাশের লাশটা পেলো অতিরিক্ত মানসিক চাপে আর সাগরের নির্মম অত্যাচারে স্বপ্না আকাশের লাশটি ধরে উচ্চস্বরে হাঁসতে শুরু করলো তারপর থেকে স্বপ্না নামের মেয়েটি পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় আকাশ নামের ছেলেটাকে খুঁজে বেড়াতো ৷৷৷